এমনকি ছিনতাই করতে গিয়ে কেউ যদি ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রেও ছাড়িয়ে আনার জন্য দাদনের ব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন ছিনতাইকারী এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। গত ১১ই জুলাই সকালে শিমিয়ন ত্রিপুরা (৩০) নামে এক যুবক শ্যামলীতে ছিনতাইয়ের শিকার হন। শ্যামলী মেরিগোল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশে একটি মোটরসাইকেলে এসে ৩ ছিনতাইকারী তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে।চাপাতি ও হাসুয়া দিয়ে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল, ব্যাকপ্যাক ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া তার পায়ের জুতা ও গায়ের টি-শার্টও খুলে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। অস্ত্রের মুখে জামা-জুতাসহ ছিনতাইয়ের ওই সিসিটিভি ফুটেজ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। পরদিন শেরেবাংলা নগর থানায় ভুক্তভোগী মামলা করলে ঘটনার তদন্তে নেমে গত বুধবার ভোরে ঢাকা, কেরানীগঞ্জ ও ভোলার চরফ্যাশন থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ও চাপাতিসহ আল আমিন (২৮), আসলাম শিকদার (২৯) ও কবির (২২) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও (ডিবি) বিভাগের সদস্যরা।এরমধ্যে আল আমিন ও আসলাম ছিনতাইয়ের কাজে সরাসরি জড়িত থাকলেও কবিরের পরিচয় ভিন্ন। তিনি মাঠপর্যায়ে ছিনতাই না করলেও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, মোটরসাইকেলসহ যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন ও আসলাম জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছিনতাই করেন তারা। একাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল-অস্ত্র তারা ভাড়া নেন কবির ও জহিরের কাছ থেকে। কবির ও জহির আপন দুই ভাই।এসব ছিনতাই চক্রের তারাই মূলহোতা। তারা (জহির ও কবির) নিজেরা কখনোই ছিনতাই করেন না। তবে ঢাকার একাধিক ছিনতাই চক্র দেখভাল করেন। এ চক্রের সদস্যদের দিয়ে প্রতিদিন ঢাকার একাধিক এলাকায় তারা চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া দিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব চাপাতি-মোটরসাইকেলের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় না। ছিনতাই শেষে মালামাল বিক্রির পর ভাড়ার টাকা মেটাতে হয়। এই ছিনতাইয়ের মালামাল বিক্রি করতেও চিন্তা করতে হয় না। ছিনতাইয়ের মালামাল জহির-কবির সিন্ডিকেটের কাছেই বিক্রি করতে হয়। আবার কেউ ছিনতাই করতে গিয়ে আটকও হয়, তখন দাদন হিসেবে সুদে অগ্রিম টাকা ধার দেয় চক্রটি। যাতে সহজেই জামিনে বের হয়ে এসে আবারো আগের মতো কার্যক্রম চালাতে পারে ছিনতাইকারীরা। আটককৃতরা জানিয়েছে, এই দুই ভাইয়ের মধ্যে কবিরের কাজ ছিনতাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা ও নিয়ন্ত্রণ করা। অগ্রিম কোনো টাকা লাগলে সেটা কবির বণ্টন করে। পরে ছিনতাই করে ধারের টাকা পরিশোধ করে মাঠপর্যায়ের ছিনতাইকারীরা। আর ছিনতাইয়ের স্পট, কয়টি চাপাতি ও মোটরসাইকেল লাগবে তা জহির নির্ধারণ করে। বিনিময়ে ছিনতাইকারীরা যে ছিনতাই করবে, সেগুলোর মালামাল জহিরের কাছে বিক্রি করা বাধ্যতামূলক। অন্য কোথাও ছিনতাইয়ের মালামাল বিক্রি করতে পারে না চক্রের সদস্যরা। সেখান থেকেই ভাগ-বাটোয়ারা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, এমন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী চক্র এই প্রথম চিহ্নিত হয়েছে। যারা ছিনতাইয়ের জন্য চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়। তিনি বলেন, এই ছিনতাইয়ের কাজে সরাসরি জড়িত থাকায় আল আমিন ও আসলাম নামে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত পারভেজ নামে আরও একজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ১৭-১৮টি করে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র ও গাড়ি ভাড়া দেয়া চক্রের কবিরকে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও চক্রের আরেক হোতা জহির এখনো অধরা। তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, এই চক্রের সদস্যরা এরআগেও গ্রেপ্তার হয়েছে। জামিনে বের হয়ে আবারো তারা একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রাকিব খান বলেন, এই মামলার তদন্তে আমাদের সামনে চাঞ্চল্যকর তথ্য ওঠে এসেছে। এরা এমন একটি চক্র, যারা অগ্রিম চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া দিয়ে ছিনতাই করায়। জাকির-রুবেলসহ রাজধানীতে এ ধরনের তিনটি চক্র কাজ করছে। তারা ছাড়াও চক্রগুলোতে অনেক সদস্য রয়েছে। তাদের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। চক্রের সকল সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।