বাংলাদেশে মার্চ-এপ্রিলে শিলাবৃষ্টির প্রবণতা বেশি থাকে। কয়েক বছর ধরে ফাগুন-চৈত্র মাসেও শিলাবৃষ্টির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মের আগেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকে এর কারণ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। উষ্ণ বায়ু ওপরের দিকে ওঠে।অন্যদিকে শীতল বায়ু নিচের দিকে নামে। এটাই আবহাওয়ার ধর্ম। আবার বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে শীতল বায়ুর স্পর্শে উষ্ণ বায়ুতে থাকা ছোট ছোট জলীয় বাষ্প জমতে শুরু করে। ঝোড়ো আবহাওয়ায় তীব্র বায়ুপ্রবাহে বাষ্পগুলো ঘনীভূত হয়ে শিলা বা মেঘে পরিণত হয়।এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া মেঘমালাকে বলা হয় বজ্রমেঘ। এই মেঘ ভারী হয়ে গেলে বায়ু আর সেটি ধরে রাখতে পারে না। তখন টুকরা টুকরা বরফ আকারে ঝরে পড়ে, এটিই শিলাবৃষ্টি। অনেক সময় শিলাবৃষ্টি পড়ার গতি ঘণ্টায় ষাট মাইল পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত ১৫ মিনিটের বেশি শিলাবৃষ্টি হয় না।গড়ে শিলার ব্যাস ৫ থেকে ১৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অবশ্য বায়ুমণ্ডলে থাকা শিলাখণ্ডগুলো আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে। মাটিতে ঝরে পড়ার সময় সেগুলো একে অন্যের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ছোট হয়ে যায়।শিলাবৃষ্টি নিয়ে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে থাকে। আদতে তা মোটেই উচ্ছ্বাসের কোনো বিষয় নয়। শিলাবৃষ্টি যে কতটা ক্ষতিকর তা কৃষকমাত্রই জানেন। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমের মুকুল বিনষ্ট হয়। বড় আকারের শিলাবৃষ্টির টিনের চালা ফুটো হয়ে বসতঘরের ক্ষতি করে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে কোথাও কোথাও।শিলাবৃষ্টির সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এই বৃষ্টি শুরু হলে কোনো অবস্থাতেই খোলা আকাশের নিচে থাকা উচিত হয়। এই সময় পাকা বাড়ি অথবা নিরাপদ ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। উন্নত দেশে গ্রিনহাউস প্রযুক্তির মাধ্যমে শিলাবৃষ্টির হাত থেকে ফসলকে সুরক্ষিত রাখা হয়। তবে তা স্বল্প পরিসরের ফসলের জন্য প্রযোজ্য। আমাদের দেশে গ্রিনহাউস প্রযুক্তির ব্যবহারও তেমন নেই। তবে আবহাওয়া সতর্কতার ওপর নজর রাখা, ফসলি জমিতে নেট বা শেড ব্যবহার, মাচা বা ছাউনি তৈরি ও কৃষি বিমা গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।