অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইমাম মাহদি মদিনা থেকে আত্মপ্রকাশ করবেন। সেখান থেকে মক্কায় আসবেন। মক্কায় কিছু মানুষ তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করবেন। তৎকালীন সময়ে আরবের জালেমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি জয়ী হবেন। তিনি হবেন মুসলিমদের নেতা।
দেখতে কেমন হবেন তিনি
ইমাম মাহদি দেখতে কেমন হবেন, এ সম্পর্কে হাদিসে আলোচনা আছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাহদি আমার বংশধর। উজ্জ্বল ললাট ও নত নাসিকা বিশিষ্ট। (অর্থাৎ দীর্ঘ নাক তথা অগ্রভাগ কিছুটা সরু এবং মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত, একেবারে চ্যাপ্টা নয়) ন্যায় ও নিষ্ঠায় পৃথিবী ভরে দেবে, ঠিক যেমন এর আগে অত্যাচার-অবিচারে ভরে গিয়েছিল। সাত বছর রাজত্ব করবে।’(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৮৫)
ইমাম মাহদি আগমনের আলামত
তখন পৃথিবীর দিকে দিকে অন্যায়-অবিচার বেড়ে যাবে। মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে। জুলুম করা হবে। সবখানে চলবে দুঃশাসন। সত্যের ওপর প্রাধান্য পাবে মিথ্যা। ধর্মের ওপর বিস্তার লাভ করবে অধর্ম। ন্যায়কে পদধূলিত করবে অন্যায়। নারী ও দুর্বলের জন্য পৃথিবী হয়ে উঠবে ভয়ংকর জায়গা। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নিয়মে চলবে দেশ। পাপাচার ও ব্যভিচারে সয়লাভ করবে পৃথিবীর অলিগলি ও পাড়া-মহল্লা। হত্যা, লুটতরাজ ও যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়বে বড় বড় জাতি ও দেশ। সে সময় পৃথিবীতে ন্যায় ও নিষ্ঠার মশাল নিয়ে আগমন করবেন ইমাম মাহদি।
বরকত নেমে আসবে পৃথিবীতে
ইমাম মাহদি শেষ সময়ে পৃথিবীতে আসবেন। তাঁর আগমনে উম্মতে মুহাম্মদির সম্মান বাড়বে। তাঁর শাসনামলে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি নামবে। জমিনে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হবে। গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বাড়বে। তিনি মানুষের মধ্যে সমানভাবে সম্পদ বিতরণ করবেন। (সিলসিলায়ে সহিহা, হাদিস : ৭১১)
নিরপরাধ লোকদের হত্যা
অন্ধকারের অতল গহ্বরে ঢেকে যাবে পৃথিবী। হত্যা করা হবে নিরপরাধ মানুষকে। হত্যা ও জুলুমের ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে দেশ-দেশান্তরে। সত্য উচ্চারণের খুব বেশি মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না। ঠিক তখনই পৃথিবীতে আসবেন ইমাম মাহদি। ইবনে হাজার হাইতামি (রহ.) বলেন, ‘নিরপরাধ লোকদের একটি বড় অংশকে হত্যা করে ফেলার পর ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে। হত্যার ফিতনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। দ্রুততার সঙ্গে এ ফিতনা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। একসময় আসমান-জমিনের মধ্যে এ ধরনের হত্যাযজ্ঞের ধারা বন্ধ হলে ইমাম মাহদির আগমন হবে।’(আল-কওলুল মুখতাসার ফি আলামাতিল মাহদিল মুনতাজার : ২১-২২ ও ৩৭)
এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বেঁচে থাকবে
ইমাম মাহদি আগমনের সময় পৃথিবীতে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বেঁচে থাকবে। আলী (রা.) বলেন, ‘ইমাম মাহদির আগমনের আগে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে হত্যা করা হবে। এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাবে। আর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অবশিষ্ট থাকবে।’ (কিতাবুল ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ : ৯৫৯)
কিয়ামতের আগে আগমন করবেন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবীর জীবন সায়াহ্নে যদি একটি মাত্র দিন অবশিষ্ট থাকে, তবে সে দিনটিকে আল্লাহ তাআলা দীর্ঘ করে আমার পরিবারের একজন ব্যক্তিকে পাঠাবেন। তার নাম আমার নাম এবং তার পিতার নাম আমার পিতার নামের মতো হবে।’(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২৩০)
ঈসা (আ.)ও তখন পৃথিবীতে আসবেন
ইমাম মাহদির সময় পৃথিবীতে ঈসা (আ.)-এর আগমন হবে। তিনি ইমাম মাহদির পেছনে ফজরের নামাজ আদায় করবেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেমন হবে যখন তোমাদের মাঝে মরিয়মের ছেলে ঈসা (আ.) অবতরণ করে তোমাদেরই একজনের পেছনে ফজরের নামাজ আদায় করবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪০৯)ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইমাম হবেন ইমাম মাহদি।
ফিলিস্তিন এবং ইমাম মাহদি
ইমাম মাহদি রাজত্বের শেষ দিকে মুসলিমদের নিয়ে মসজিদুল আকসায় আশ্রয় নেবেন। বাইরে দাজ্জাল ইহুদিদের নিয়ে তাদের হত্যা করার জন্য বন্দি করে রাখবে। অন্যদিকে মুসলিমরাও দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে। এরই মধ্যে ঈসা (আ.) দামেস্কে আগমন করে মুমিনদের রক্ষা করতে ফিলিস্তিনে রওনা হবেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২৪০)
দাজ্জালকে হত্যায় সহযোগিতা করবেন মাহদি
সুনানে আবু দাউদের ভাষ্যকার আল্লামা শামছুল হক আজিমাবাদী বলেন, ‘শেষ যুগে একজন সেলাক আগমন করে ইসলামকে শক্তিশালী করবেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। মুসলমানরা তাঁর অনুসরণ করবে। সব ইসলামী রাজ্যের ওপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার হবে। তাঁর নাম হবে মাহদি। তাঁর আগমনের পরই সহিহ হাদিসে বর্ণিত কিয়ামতের অন্য বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হবে। তাঁর সময়েই ঈসা (আ.) আগমণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ ব্যাপারে মাহদিও তাঁকে সহযোগিতা করবেন।’
তিনি কত বছর রাজত্ব করবেন?
ইমাম মাহদি কত বছর রাজত্ব করবেন—এ নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে মতভেদ আছে। সিলসিলায়ে সহিহার ৭১১ নম্বর হাদিসে আছে, তিনি সাত বা আট বছর রাজত্ব করবেন। কাতাদাহ (রহ.) বলেন, ‘তিনি ৯ বছর অবস্থান করবেন। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) বলেন, ‘মুআজ ছাড়া অন্যরা হিশাম থেকে বর্ণনা করে বলেন, ৯ বছর অবস্থান করবেন।’(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৮৭)