ক্ষমতার শিরক : বিপদে পড়লে স্বীয় পীরকে স্মরণ করা শিরক।
গুণের (সিফাত) শিরক : আল্লাহর কোনো সৃষ্টিকে ওই সব গুণের অধিকারী মনে করা শিরক, যা শুধু আল্লাহর অধিকার।
আমলের শিরক : আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য কোরবানি করা, মানত করা, নজর-নিয়াজ দেওয়া ইত্যাদি শিরক।
বিবিধ শিরক : আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর কসম খাওয়া, অন্যের জিকির করা, অন্যের কাছে তাওবা করা, কাউকে ক্ষতি ও উপকারের মালিক করা এবং কাউকে আল্লাহর সমতুল্য বলে মনে করা শিরক।
প্রখ্যাত আলেমে দ্বিন প্রফেসর ড. আ ন ম রফিকুর রহমান তাঁর বিখ্যাত ‘আশ শিরক’ গ্রন্থে বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু শিরকের একটি তালিকা প্রদান করেছেন, যা নিম্নরূপ—
ওলিদের কবরের ওপর অথবা পার্শ্ববর্তী স্থানের গাছের শিকড়, বাকল ব্যবহারে বিবিধ কল্যাণ লাভ হবে বলে বিশ্বাস করা। ওলি, বুজুর্গদের কবরের পার্শ্ববর্তী স্থানের গাছে মানত করে সুতা, তাগা ইত্যাদি বাঁধলে মানত পুরা হবে বলে বিশ্বাস করা। বিভিন্ন মাজার থেকে আনা সুতা, তাগা হাতে বাঁধলে বা গলায় ঝুলালে বিপদ-আপদ দূর হবে, রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করা এবং কবরে সিজদা করা।
নবী-রাসুলরা বা ওলিরা গায়েব (সব ধরনের গায়েবি বিষয়) জানেন বলে বিশ্বাস করা। জীবনকে সুখকর করার জন্য ওলিদের কবর, কবরের দেয়াল, গিলাফ ইত্যাদি স্পর্শ করে, চুমু খেয়ে বরকত নেওয়া। ওলিরা (জীবিত বা মৃত অবস্থায়) সর্বত্র হাজির হতে পারেন—এমন বিশ্বাস করা। ওলিদের কবর, বুজুর্গ ব্যক্তি ও পীরের সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকা। দোয়া গৃহীত হওয়ার জন্য বুজুর্গদের মাজারের দিকে মুখ করে দোয়া করা।
ক্ষমতার দিক থেকে মাজারস্থিত ব্যক্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা। ওলিদের মাজারে অবস্থান গ্রহণ করে তাঁদের বাতেনি ফায়েজ লাভের আশা করা। ওলিরা বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) (সব ধরনের) গায়েব জানেন বলে বিশ্বাস করা (তবে হ্যাঁ, মহান আল্লাহ ওহির মাধ্যমে তাঁর প্রিয় হাবিবকে অনেক গায়েবি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে উপমহাদেশে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মিলাদ মাহফিলে হাজির হন—এ ধারণা পোষণ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথিত কদম মুবারকের ছাপবিশিষ্ট পাথর দ্বারা রোগমুক্তি ও কল্যাণ কামনা করা।
আবু জাহলের হাতের পাথর দিয়ে রোগমুক্তি ও কল্যাণ কামনা করা। টিয়া পাখি, বানরের মাধ্যমে ভাগ্য জানার চেষ্টা করা। ভাগ্য সম্পর্কীয় ব্যাপারে গণক ও জ্যোতিষদের কথায় বিশ্বাস করা। গাউস, কুতুব, আবদাল দুনিয়া পরিচালনা করেন, মানুষের ভালোমন্দ করেন বলে বিশ্বাস করা।
‘আহমাদ’ আর ‘আহাদ’ এর মধ্যে কেবল ‘মীম’ অক্ষরের পার্থক্য বলে বিশ্বাস করা। আরশে যিনি আল্লাহ ছিলেন, মদিনায় তিনিই রাসুল হয়ে আগমন করেছেন বলে বিশ্বাস করা। আল্লাহর ধন খাজাকে দিয়ে আল্লাহ হলেন শূন্য হাত। এখন যা কিছু প্রয়োজন খাজার নিকট চাইতে হবে, এ বিশ্বাস পোষণ করা।
কোনো ছবি বা মূর্তিকে সামনে রেখে মাথা নত করা, কুর্নিশ করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আইনদাতা, বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করা। কোনো ব্যক্তিকে দোজাহানের কিবলা বলে বিশ্বাস করা। কোনো বুজুর্গ ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক জায়গায় অবস্থান করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা। কবর জিয়ারতের পর কবরের সম্মানে পিছপা হয়ে আসা (কবরকে পিছ দিয়ে আসা বেয়াদবি মনে করা)।
আকিক, পান্না প্রভৃতি পাথর ও রত্ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, এরূপ বিশ্বাস পোষণ করা। (প্রফেসর ড. আ ন ম রফিকুর রহমান, আশ শিরক, পৃ. ১৪০-১৪২)
[সূত্র : ড. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, ইসলামের ধর্মীয় নীতি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতি, এম আবদুল্লাহ অ্যান্ড সন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা-৩৪০-৩৪৩ (ঈষৎ পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত)]