৫. উত্তরাধিকার ও সম্পত্তির অধিকার : ইসলাম নারীকে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হিসেবে নির্ধারিত অংশ প্রদান করেছে। ইসলামের আগে নারীদের তো বাঁচার অধিকারই ছিল না, বাঁচলেও তাদের বিক্রির উপযোগী সম্পত্তি মনে করা হতো; ইসলাম তাকে সম্মানিত করেছে, এমনকি (যৌক্তিক পরিমাণে) ওয়ারিশ সম্পত্তির অংশীদার হওয়ার সম্মান দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘ছেলেসন্তানের জন্য রয়েছে মেয়ের দ্বিগুণ অংশ।’ (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১১)এখানে দ্বিগুণ হওয়া ‘বৈষম্য নয়, বরং দায়িত্বভিত্তিক ইনসাফ। কারণ পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পুরুষের ওপর, ইসলামের পক্ষ থেকে নারীর ওপর কারো দায়িত্ব গ্রহণের আবশ্যকতা নেই।’ কোনো ভাই না থাকার কারণে যখন নারীর ওপর বাড়তি দায়িত্ব চলে আসে, তখন তার প্রাপ্য সম্পদের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়।
৬. বিবাহে নারীর স্বাধীনতা ও সম্মান : ইসলাম নারীর মতামত ও সম্মতিকে বিবাহের পূর্বশর্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো কুমারীকে তার মতামত ছাড়া বিবাহ দেওয়া যাবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৩৬)একজন নারী চাইলেই বিয়ে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, এমনকি তালাক বা খোলার মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদও করতে পারেন। ইসলাম নারীর এই অধিকারকে পূর্ণভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
৭. মাতৃত্বের মর্যাদা ও অধিকার : ইসলামে মায়ের মর্যাদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বিখ্যাত হাদিস—‘তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার বাবা।’ (বুখারি ও মুসলিম)ইসলাম এখানে নারীকে কেবল সন্তান জন্মদানের মাধ্যম নয়; বরং সন্তানদের নীতি ও চরিত্র গঠনেও মুখ্য ভূমিকা পালনকারী হিসেবে নেতৃত্বের মর্যাদা দিয়েছে।
৮. সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার : নারী সাহাবিরা রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে মতামত প্রকাশ করেছেন, প্রশ্ন করেছেন, এমনকি বায়াত গ্রহণে অংশ নিয়েছেন। ইসলামে নারীদের সমাজে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের অনুমতি রয়েছে। তবে শর্ত হলো—তা হতে হবে পর্দা ও শালীনতার সীমা অতিক্রম না করে। ইসলাম নারীর সম্মান, নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদাকে শুধু নৈতিক বা ধর্মীয় ভাষায় উপস্থাপন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তা বাস্তবে ইসলামী সমাজে প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছে। ইসলামের স্বর্ণযুগের প্রতি আলোকপাত করলেই তা আমাদের সহজেই বুঝে আসবে।
ইসলাম নারীকে করুণা দেখিয়ে নয়, বরং মানবতার মর্যাদাসম্পন্ন সদস্য হিসেবে তাদের ন্যায্য ও যথার্থ অধিকার প্রদান করেছে। আল্লাহ আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন।