ইসলামে শরণার্থী কারা : ‘Refugee’ বা শরণার্থী শব্দটি মূলত এসেছে ফ্রেঞ্চ ‘refugie’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘আশ্রয় নিতে আসা’। অর্থাৎ ‘refugee’ বা শরণার্থী শব্দটি দ্বারা এমন কাউকে বোঝায়, যে আশ্রয় বা সুরক্ষা চাচ্ছে। আরবিতে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহূত হয়। যেমন, ‘ইসতিজারা’ (সুরক্ষার আবেদন) বা ‘লাজা’। বিখ্যাত আরবি অভিধানকারক ইবনে মঞ্জুরের মতে, ‘কোনো কিছুকে কোনো জায়গায় আশ্রয় নেওয়া’। তিনি ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট করার জন্য বলেন, ‘আরবি শব্দ ‘লুজু’ দ্বারা ‘শরণাপন্ন হওয়া বা সুরক্ষার সন্ধানে যাত্রা’ বোঝায়।” (ইবনে মনজুর, লিসানুল আরব, পৃষ্ঠা : ১১৫২) অর্থাৎ আরবি লাজা শব্দটি ইংরেজি Refugee শব্দের সমার্থক। এটি দ্বারা এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি আশ্রয়, নিরাপত্তা এবং বাসস্থান খুঁজছেন। তবে মূলত ইসলামে শরণার্থীদের রক্ষার ক্ষেত্রে যে শব্দটি মৌলিক ভিত্তি তা হলো ‘আমান’। এ শব্দ দ্বারা নিরাপত্তা এবং যারা আশ্রয় প্রার্থনা করে তাদের সুরক্ষা বোঝায়। সে কারণেই আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তি ইসলামে ‘মুস্তাআমেন’ (‘আমান’ শব্দ থেকে উদ্ভূত) নামে পরিচিত।
প্রকৃতপক্ষে মুস্তাআমেন ব্যক্তি মুসলিম বা অমুসলিম যা-ই হোক, তাকে আশ্রয় দেওয়ার মূলনীতিই ইসলাম নির্দেশ করে। ওপরে বর্ণিত সুরা তাওবার এই আয়াতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যায়।
শরণার্থীদের প্রতি সদয় হওয়া যে কতটা সওয়াবের, তা মদিনার আনসারদের ব্যাপারে নাজিল হওয়া আরেকটি আয়াত থেকে আরো স্পষ্ট হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী আর যারা তাদের যাবতীয় সত্কর্মে অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত যার তলদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হলো মহা সফলতা। (সুরা তাওবা, আয়াত ১০০)
তাফসিরবিদদের মতে এই আয়াতে প্রথমত মুহাজিরগণের কথা বলা হয়েছে, যাঁরা দ্বিনের খাতিরে আল্লাহ ও রাসুলের আদেশ পালনার্থে মক্কা ও অন্যান্য এলাকা থেকে হিজরত করে সব কিছু ত্যাগ করে মদিনায় চলে যান। দ্বিতীয়ত আনসারগণ, এরা মদিনার অধিবাসী ছিলেন। এরা সর্বাবস্থায় রাসুল (সা.)-এর সাহায্য ও সুরক্ষা বিধান করেছিলেন এবং মদিনায় আগত মুহাজিরদের যথাযথ সম্মান করেছিলেন এবং নিজেদের সব কিছু তাদের খিদমতে কোরবান করে দিয়েছিলেন। তৃতীয়ত যারা এই প্রথম দুই শ্রেণির লোকদের অনুসরণ করেছিলেন, তাঁদের সবার প্রতি মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট, তিনি তাঁদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
অতএব দ্বিন প্রতিষ্ঠার জন্য কখনো শরণার্থী হওয়ার প্রয়োজন হলে কিংবা কেউ শরণার্থী হলে তার অধিকার রক্ষা করলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত, শরণার্থীদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকা।
আজকের বিশ্বে যখন লাখো মানুষ শরণার্থী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে, তখন মুসলমানদের কর্তব্য হলো মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করে শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আসুন, ইসলামের মর্মবাণীকে ধারণ করে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াই, যাতে মানবতার জয় হয় এবং সমাজ শান্তি ও সহমর্মিতায় ভরে ওঠে।