সুরা : আনআম, আয়াত : ১১-১২
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
قُلۡ سِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ ثُمَّ انۡظُرُوۡا كَیۡفَ كَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُكَذِّبِیۡنَ ﴿۱۱﴾
قُلۡ لِّمَنۡ مَّا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ قُلۡ لِّلّٰهِ ؕ كَتَبَ عَلٰی نَفۡسِهِ الرَّحۡمَۃَ ؕ لَیَجۡمَعَنَّكُمۡ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ ؕ اَلَّذِیۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ فَهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۲﴾
সরল অনুবাদ
(১১) বলুন, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে, তাদের পরিণাম কি হয়েছিল!’
(১২) বলুন, ‘আকাশ ও ভূমণ্ডলে যা আছে তা কার?’ বল, ‘তা আল্লাহরই।’ দয়া করা তিনি নিজ কর্তব্য বলে স্থির করেছেন। কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই সমবেত করবেন, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। যারা নিজেই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা বিশ্বাস করবে না।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরার বিগত কয়েকটি আয়াতে কাফিরদের অবিশ্বাস, মিথ্যাচার, ঠাট্ট-বিদ্রূপের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। অতপর বিগত দিনে তার পরিণতি কি হয়েচিল সেটি অবলোকনের জন্য আল্লাহর সুবিশাল জমিনে বিচরণ করতে আহবান জানিয়ে নবী (সা.) কে সম্বোধন করে এই আয়াত নাজিল হয়েছে। যেখানে নবী (সা.)-কে বলা হচ্ছে যে, আপনি এসব অমূলক দাবি-আপত্তি উত্থাপনকারী আর মিথ্যারোপকারীদের বলুন; তারা যেনো দুনিয়াতে ভ্রমন করে পূর্ববর্তী নবী ও তাদের আনিত দীন নিয়ে ঠাট্ট-বিদ্রূপকারীদের পরিণতি কি হয়েছিল তা দেখে নেয়।
১২ নং আয়াতে কাফেরদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছে: নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ে যা আছে, তার মালিক কে? অতঃপর আল্লাহ নিজেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাচনিক উত্তর দিয়েছেনঃ সবার মালিক আল্লাহ।
رَحْمَتِيْ تَغْلِبُ غَضَبِيْ
“আমার অনুগ্রহ আমার ক্রোধের উপর প্রবল থাকবে।
তবে এ দয়া ও রহমত কিয়ামতের দিন কেবল ঈমানদারদের জন্য হবে। আর কাফেরদের প্রতি প্রতিপালক চরম ক্রোধান্বিত হবেন। অর্থাৎ, দুনিয়াতে তো তাঁর রহমত অবশ্যই ব্যাপক; যার দ্বারা মু’মিন ও কাফের, সৎ ও অসৎ এবং বাধ্যজন ও অবাধ্যজন সকলেই উপকৃত হচ্ছে। মহান আল্লাহ কোনো ব্যক্তিরই রিজিক অবাধ্যতার কারণে বন্ধ করেন না। তবে তাঁর রহমতের এই ব্যাপকতা দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ।
প্রতিফল ও প্রতিদানের স্থান আখেরাতে আল্লাহর সুবিচারক হওয়ার গুণের পূর্ণ বিকাশ ঘটবে, যার ফলে সেখানে ঈমানদাররা তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় লাভ করবে এবং কাফের ও ফাসেকরা জাহান্নামের চিরন্তন শাস্তির যোগ্য বিবেচিত হবে। এই জন্য কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে-
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُمْ بِآياتِنَا يُؤْمِنُونَ
‘‘আমার দয়া প্রতিটি জিনিসের উপর পরিব্যাপ্ত। সুতরাং তা তাদের জন্য লিখে দেব যারা ভয় রাখে, যাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।’’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত : ১৫৬)
এর পর (لَیَجۡمَعَنَّكُمۡ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ) “কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই সমবেত করবেন“ বাক্যের উদ্দেশ্য এই যে, কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষকে কবরে একত্রিত করতে থাকবেন এবং কেয়ামতের দিন সবাইকে জীবিত করবেন আর তোমাদেরকে তোমাদের কর্মকাণ্ডের শাস্তি প্রদান করবেন। (কুরতুবী; ফাতহুল কাদির)