এ মাঠে কিছুদিন খেলাধুলা করে এক অজানা নিরুদ্দেশ গন্তব্যের দিকে যেতে হবে। সেখানে অনন্তকালের জন্য চিরস্থায়ীভাবে থাকতে হবে। এ বিশ্ব চরাচরে পড়ে থাকবে আমাদের অতি কষ্টে অর্জিত সব অমূল্য ধনসম্পদ। যা সঙ্গে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থাই আমরা করে যেতে পারি না। এ জন্য নিয়তি আমাদের কোনো সময়ই দেয় না। আমাদের জীবন অবসানের পর রেখে যাওয়া এ সম্পদের কী অবস্থা হবে, কীভাবে ব্যয় হবে তাও আমরা বলতে পারি না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল কোরআনের আলোকে আমাদের প্রিয় নবী মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে সুসংবাদ প্রেরণ করেছেন যে, আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া তিনটি অবদান এ দুনিয়ায় বিরাজ করবে এবং পরকালেও নাজাত তথা জান্নাত লাভে সহায়তা করবে। যেমন- ১. তোমার সন্তানকে যদি সুসন্তান করে রেখে যেতে পার তবে তারা মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দুই হাত তুলে প্রাণভরে তোমাদের জন্য দোয়া করবে- রব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছগিরা। হে পরম দয়ালু আল্লাহ, আমার পিতা-মাতাকে সস্নেহে লালনপালন ও প্রতিপালন কর। ২. আল্লাহর রাস্তায় ফিসাবিলিল্লাহ হিসেবে কোনো বস্তু বা ধনসম্পদ দান করে যাওয়া যা এতিম নিঃস্ব হতদরিদ্র গরিব মিশকিন পঙ্গুদের জন্য ব্যয় হবে। ৩. মানবতার সেবাসহ সৃষ্টিকুলের জন্য কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরি বা স্থাপন করে যাওয়া, যাতে অব্যাহতভাবে পরোপকার হতে থাকবে। ইসলামের দৃষ্টিতে সৎভাবে ধনসম্পদ অর্জন বা ধনী হওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ নেই। তবে অর্জিত সম্পদ সৎভাবে সঠিক পথে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের সমাজে দেখা যায়, আমরা বেপরোয়াভাবে হিংসা-বিদ্বেষ, জোরজবরদস্তি, লুটপাট, অন্যায়ভাবে সম্পদ আহরণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলি। এ সম্পদ জমানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় দেখা যায় নিজের জমানো সম্পদ মানুষ নিজেই ভোগ করে যেতে পারে না। একান্তভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাব, হাজার হাজার কোটি টাকার ধনসম্পদ থাকলেও তার মালিক শান্তিতে ঘুমাতে পারে না তার জমানো টাকার চিন্তায় এবং লোভ-লালসার প্ররোচনায়। ইচ্ছা থাকলেও পেটভরে খেতে পারে না মুখে রুচি না থাকার কারণে। এর কারণ হলো- আমরা ধনসম্পদের প্রতি এত বেশি লোভী হয়ে পড়ি যে, লোভের বশবর্তী হয়ে খুনাখুনি করে হলেও ধনসম্পদ অর্জন করে থাকি। অন্যায়ভাবে ধনসম্পদ জমিয়ে কার জন্য রেখে যাব- তা আমরা ঘুণাক্ষরেও ভাবি না। ধনসম্পদের লোভে মানইজ্জত বিসর্জন দিতে হলেও আমরা কুণ্ঠাবোধ করি না। মৃত্যুর পর আমাদের খালি হাতেই অজানার পথে যাত্রা করতে হবে। মূলত এ জীবনটা বড় বেশি ক্ষণস্থায়ী। এক মুহূর্তের জন্যও বেঁচে থাকার আশা করতে পারি না। তাই আমাদের সবাইকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা অন্যায়ভাবে অবৈধ পথে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলব না। যেহেতু দিন দুনিয়ার মালিক আল্লাহ সেহেতু তাঁর ওপর আশা-ভরসা রাখতে হবে।