মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন সব দিক অন্ধকার মনে হয়, পথ রুদ্ধ হয়ে যায়, আশার আলো নিভে আসে। মহানবী (সা.)-এর জীবনেও প্রিয়তমা স্ত্রীর ইন্তেকাল, চাচার ইন্তেকাল, অতঃপর তায়েফের নির্মমতার শিকার হওয়ার মতো ধারাবাহিক ঘটনাচক্রগুলো ছিল তেমনই এক বেদনায় ভরা পরীক্ষাময় অধ্যায়। স্ত্রী ও চাচাকে হারানোর পরও দ্বিনের দাওয়াত দিতে গিয়ে অবজ্ঞা, বিদ্রুপ, এমনকি নিষ্ঠুরভাবে রক্তাক্ত করে তাঁকে শহর থেকে বের করে দেওয়া। মানবিক কষ্টের এমন দুঃসহ মুহূর্তে মহানবী (সা.)-এর হৃদয় থেকে যে দোয়া বের হয়েছিল, তা শুধু ব্যক্তিগত আর্জি নয়; বরং প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির জন্য চিরন্তন সান্ত্বনা, আশাবাদ ও আল্লাহর দিকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের এক অনুপম শিক্ষাও বটে।
এই দোয়ায় যেমনি রয়েছে অসহায়ত্বের স্বীকারোক্তি, তেমনি রয়েছে বিরাট আশা; কাজগুলোতে ব্যথা আছে, কিন্তু অভিযোগ নেই; কষ্টের ভার আছে, কিন্তু আল্লাহর রহমতের গভীর ভরসা থেকেও মুক্ত নয়। একটি মুমিন হৃদয় যে কিভাবে সংকট, অপমান ও বিপর্যয়ের মধ্যে থেকেও আল্লাহর দরবারে বিনম্র থাকে; এই দোয়া তার জীবন্ত নিদর্শন।
اَللَّهُمَّ إِلَيْكَ أَشْكُوْ ضَعْفَ قُوَّتِيْ وَقِلَّةَ حِيْلَتِي وَهَوَانِيْ عَلَى النَّاسِ، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ، أَنْتَ رَبُّ الْمُسْتَضْعَفِيْنَ وَأَنْتَ رَبِّيْ، إِلَى مَنْ تَكِلُنِيْ؟ إِلَى بَعِيْدٍ يَتَجَهَّمُنِي؟ أَمْ إِلَى عَدُوٍّ مَلَّكْتَهُ أَمْرِي؟ إِنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ عَلَيَّ غَضَبٌ فَلَا أُبَالِي، وَلَكِنَّ عَافِيَتَكَ هِيَ أَوْسَعُ لِيْ، أَعُوذُ بِنُوْرِ وَجْهِكَ الَّذِيْ أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وَصَلُحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، أَنْ يَحِلَّ عَلَيَّ سَخَطُكَ أَوْ يَنْزِلَ بِيْ غَضَبُكَ، لَكَ الْعُتْبَى حَتَّى تَرْضَى، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ۔
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইলাইকা আশকু দা‘ফা কুওয়াতি, ওয়া কিল্লাতা হিলাতি, ওয়া হাওয়ানি ‘আলান্ নাস। ইয়া আরহামার রাহিমীন, আন্তা রাব্বুল মুসতাদ্‘আফীন, ওয়া আন্তা রাব্বী।
ইলা মান্ তাকিলুনি? ইলা বায়িদিন ইয়াতাজাহ্হামুনি? আম্ ইলা ‘আদুয়্যিন মাল্লাকতাহু আমরি? ইন্ লাম ইয়াকুন বিকা ‘আলাইয়া গাদাবুন ফালা উবালি; ওয়ালাকিন্ ‘আফিয়াতুকা হিয়া আওসা‘উ লি। আউজু বিনুরি ওয়াজহিকাল্লাজি আশরাকাত্ লাহুয্ জুলুমাত, ওয়া সালুহা ‘আলাইহি আমরুদ দুনিয়া ওয়াল-আখিরাহ। আন ইয়াহিল্লা ‘আলাইয়া সাখাতুকা আও ইয়ানজিলা বি গাদাবুকা। লাখাল ‘উতবা হাত্তা তারজা, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিকা।
”
অনুবাদ : “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছেই অভিব্যক্তি পেশ করছি, আমার সক্ষমতার দুর্বলতা, সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা এবং মানুষের কাছে আমার লাঞ্ছনার কথা। হে পরিপূর্ণ দয়াময় পরম দয়ালু! আপনি মজলুমদের রব, আপনি-ই আমার রব। আপনি আমাকে কার ওপর ছেড়ে দেবেন? এমন কোনো দূরের মানুষের ওপর; যে আমাকে কষ্ট দেবে? নাকি এমন কোনো শত্রুর হাতে; যাকে আপনি আমার ব্যাপারে ক্ষমতা দিয়েছেন? যদি আপনার অসন্তুষ্টি আমার ওপর না থাকে, তবে আমি কিছুই পরোয়া করি না। তবে আপনার দানকৃত নিরাপত্তা ও সুস্থতা আমার জন্য বিরাট প্রশস্ততার বিষয়। আমি আশ্রয় নিচ্ছি আপনার সেই মুখমণ্ডলের নূরের, যার দ্বারা অন্ধকার দূর হয়ে যায় এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সব কিছুর ব্যবস্থা ঠিক পথে ফিরে আসে; যাতে আপনার গজব আমার ওপর নেমে না আসে কিংবা আপনার অসন্তুষ্টি আমার ওপর চেপে না বসে।
সব ক্ষমাপ্রার্থনা আপনারই কাছে আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত। আর আপনি ছাড়া শক্তি ও ক্ষমতা লাভের অন্য কোনো উপায় নেই।
(ইবন হিশাম, আস সিরাতুন নবুবিয়্যাহ, ১/২৪০-৪২১) ইবন ইসহাক থেকে বর্ণিত; আল-বাইহাকী, দালায়িলুন নবুয়্যাহ, ২/ ২৩০; আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন, ২/৬১৫।
মুহাদ্দিসগণ এই দোয়াকে সীরাহ-গ্রন্থসমূহে নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিবরণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ..