ডায়াবেটিস তখনই হয়, যখন শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন দরকার হয়। তবে প্রকৃতিতেই আছে কিছু সহজ উপায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো মেথি দানা।ভারতীয় রান্নাঘরে সহজলভ্য এই বীজ আঁশে সমৃদ্ধ এবং হজমের গতি ধীর করে রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করতে পারে। শুধু তাই নয়, মেথি পানির আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।
ইনসুলিন সেনসিটিভিটি মানে কোষ কতটা কার্যকরভাবে ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দিচ্ছে, সেটিকে বুঝায়। যদি সেনসিটিভিটি কমে যায়, তবে রক্তে শর্করা বেড়ে যায়। মেথি দানার অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সাহায্য করতে পারে। ২০০৯ সালে জার্নাল অব মেডিক্যাল ফুড-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেথি আটা দিয়ে তৈরি খাবার খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ফল ভিটামিন অ্যান্ড নিউট্রিশন রিসার্চ-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১০ গ্রাম মেথি দানা গরম পানিতে ভিজিয়ে খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গ্লুকোজ শোষণ কমায়
ভেটেরিনারি ওয়ার্ল্ড-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেথি দানা অন্ত্রে গ্লুকোজ শোষণ কমাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে হাইপারগ্লাইসেমিয়া (অতিরিক্ত রক্তে শর্করা) ঝুঁকি কমে এবং টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ১০ গ্রাম মেথি দানা ৪-৬ মাস খেলে ফাস্টিং ব্লাড সুগার ও এইচবিএ১সি কমে। জার্নাল অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডার-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, নিয়মিত এই পরিমাণ গ্রহণ করলে প্রি-ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে।
কিভাবে তৈরি করবেন
১ চা চামচ (প্রায় ৫ গ্রাম) মেথি দানা নিন। এবার আধা কাপ পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে এই পানি পান করুন এবং ভেজানো দানাগুলো চিবিয়ে খান।
মেথি দানার ঝুঁকি ও সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় : মেথি জরায়ু সংকোচন ঘটাতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত। এ ছাড়া, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, স্তন্যদানকালে অতিরিক্ত মেথি খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
হরমোন-সংবেদনশীল সমস্যা : মেথি ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করতে পারে। তাই স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের মতো হরমোন-সংবেদনশীল রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
শরীরের গন্ধ পরিবর্তন : ফুড কেমেস্ট্রি (২০১১)-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মেথিতে থাকা ডাইমিথাইলপাইরাজিন যৌগের কারণে কিছু মানুষের শরীরে ম্যাপল সিরাপের মতো গন্ধ হতে পারে।
অ্যালার্জির ঝুঁকি : মেথি খেলে কারো কারো শরীরে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা ফোলা দেখা দিতে পারে। তাই খাবারে অ্যালার্জি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া : মেথির আঁশ ওষুধের শোষণ কমাতে পারে এবং ডায়াবেটিস বা রক্ত জমাট বাঁধা সংক্রান্ত ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।