যশোর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম শেখপুরা। কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ি ইউনিয়নের গ্রাম এটি। শেখপুরা গ্রামে রয়েছে মোগল আমলে নির্মিত একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। যার মধ্যে শেখপুরা শাহি মসজিদ অন্যতম।
আনুমানিক খ্রিস্টীয় ১৭ বা ১৮ শতকে মৌলভি সৈয়দ বিরাজতুল্লাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক। তিনি অত্র অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন এবং ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ঘটান। ফলে মসজিদে প্রতিষ্ঠা করেন একটি পাঠশালা।হিন্দু-মুসলিম-নির্বিশেষে শিশুরা মসজিদের পাঠশালায় অধ্যয়ন করত।বাংলা ভাষার বিখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তও এই মসজিদের ছাত্র ছিলেন। এখানে তিনি বাংলা, ফারসি ও আরবি ভাষা শেখেন। মসজিদের ইমাম মৌলভি লুত্ফুল হক ছিলেন কবির প্রথম শিক্ষাগুরু।
নিকটস্থ সাগরদাড়ি গ্রামে মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, ১৮৩০ সালে কবি মসজিদের পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন।
কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে সাগরদাড়ি ইউনিয়নের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শেখপুরার এ মসজিদটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে।প্রত্নত্ত্ববিদরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে শেখপুরা শাহি মসজিদ মোগল আমলেই নির্মিত এবং মোগল স্থাপত্যরীতিতেই নির্মিত।
মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট, এর সামনের বারান্দায় রয়েছে আটনি স্তম্ভ এবং তিনটি প্রবেশদ্বার। সামনের চত্বর দেয়ালঘেরা। চত্বরে প্রবেশের জন্য দুটি প্রবেশপথ আছে। চত্বর দেয়ালের উচ্চতা এক মিটার। মসজিদের আয়তন দৈর্ঘ্যে ২১.৫ মিটার এবং প্রস্থে ১৬.৬ মিটার। মসজিদের উচ্চতা ১২ মিটার। মসজিদের পূর্ব পাশে চারটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি ঝুল বারান্দা ছিল। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদের মূল অবকাঠামো সংস্কার করে। এ সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত বারান্দা সংস্কার করা যায়নি। তবে তার কিছুটা ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে আছে।শতবর্ষী এই মসজিদে এখনো সচল রয়েছে প্রাচীন পাঠশালা। এখনো প্রায় ১০০ শিশু শেখপুরা শাহি মসজিদে কোরআন শেখে। স্থানীয় মানুষের কাছে মসজিদটি শুধু নামাজ পড়ার স্থান নয়, বরং তাদের কাছে শেখপুরা শাহি মসজিদ শিক্ষা-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ স্মারকও বটে। তাই শেখপুরা গ্রামের অধিবাসীদের দাবি, সরকার যেন মসজিদটির প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হয়। এটি সংস্কার ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।