তাই অভিভাবকদের সচেতনতা, আগাম সতর্কতা এবং যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।ডেঙ্গু ভাইরাস মূলত চারটি প্রধান ধরনে (ডিইএনভি-১, ডিইএনভি-২, ডিইএনভি-৩, ডিইএনভি-৪) বিভক্ত। একজন ব্যক্তি যদি একবার আক্রান্ত হন, এবং পরবর্তীবার অন্য কোনো ধরনে আক্রান্ত হলে তার শরীরের প্রতিক্রিয়া আরও জটিল হতে পারে। সাধারণত সকালের দিকে ও বিকেলে এডিস মশা বেশি সক্রিয় থাকে এবং এরা ফুলদানি, টব, পরিত্যক্ত টায়ার, পানির ট্যাংক কিংবা বৃষ্টির জমে থাকা পরিষ্কার ও স্থির পানিতে ডিম পাড়ে।শিশুদের ডেঙ্গু শনাক্তকরণ তুলনামূলক কঠিন, কারণ তারা অনেক সময় তাদের উপসর্গ সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। তবে কিছু লক্ষণ যেমন ১০১ ডিগ্রি বা তার বেশি জ্বর, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশি ও হাড়ে ব্যথা, বমি বা বমির ভাব, ক্ষুধামন্দা, পাতলা পায়খানা, শরীরে র্যাশ বা লালচে দাগ, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা নিস্তেজতা, গাঁটে ব্যথা বা ফোলাভাব দেখা দিলে তা ডেঙ্গুর লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে।শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর অনেক দ্রুত জটিল রূপ নিতে পারে।বিশেষ করে হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের ঝুঁকি বেশি থাকে। এসব ক্ষেত্রে রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। আর এমন অবস্থা হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। ডেঙ্গুর জন্য বর্তমানে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাই একমাত্র পথ।শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার দেওয়া, সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিশ্চিত করা এবং জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন কিংবা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা। শিশুদের দিনে মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে ফুলহাতা জামা, মশারি ও মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। ঘরের ভেতর ও বাইরে কোথাও পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না এবং সপ্তাহে অন্তত একবার সকল পানির পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। একইসাথে স্কুল, খেলার মাঠ এবং অন্যান্য শিশুদের আড্ডার স্থানেও মশা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু এক জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা অবহেলা করলে প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই হতে পারে শিশুর জীবন রক্ষার প্রধান উপায়। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের প্রতিটি পরিবর্তনের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা।লেখক: সিনিয়র কনসালটেন্ট পেডিয়াট্রিক্স ও নিওন্যাটোলজি নিওনেটাল ইন্টেনসেভিস্ট, ফেলো নিওন্যাটোলজি (সিঙ্গাপুর) এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।