এই পড়া শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং জ্ঞানার্জনের তাগিদে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করাও ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ।যুগে যুগে মুসলিম মনীষীরা জ্ঞান অণ্বেষণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কখনো মাইলের পর মাইল মরুভূমি পেরিয়েছেন। আবার কখনো সমুদ্রযাত্রা করে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন। তাদের শিক্ষা সফর আর আজকের শিক্ষা সফরের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান লক্ষণীয়।এসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানা সবার জন্য জরুরি।
সমাজের চরম বাস্তবতা
আজকাল সমাজের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে কিছু কিছু মাদরাসায়ও এখন চালু হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও সফর বা পিকনিকে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বেশির ভাগ আয়োজনে দ্বিনি শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের চেয়ে বিনোদন, অবাধ মেলামেশা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডই বেশি লক্ষ্য করা যায়। পার্ক, রিসোর্ট বা সমুদ্রসৈকতে উদ্ভট পোশাক, গান-বাজনা ও সেলফি সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে তা আয়োজিত হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের চরিত্রে নৈতিক অবক্ষয় নেমে আসছে। এগুলো ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাই অভিভাবক, শিক্ষক ও আয়োজকদের কর্তব্য—শিক্ষা সফরের নামে সব রকম বেহায়াপনার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া। ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা সফরের আয়োজন করা। সংক্ষেপে সফরের তিনটি রীতি এমন—
১. সফরের পরিবেশে ইসলামী শালীনতা বজায় রাখতে গানবাদ্য পরিহার করা। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শরাব পান করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল বা তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরি শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪৪)
২. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া। নারীদের জন্য আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করা অথবা নারীর সঙ্গে মাহরাম পুরুষ রাখা। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো মহিলার সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করে, কোনো স্ত্রীলোক যেন কোনো মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজে যাবে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তবে যাও, নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হজ করো। (বুখারি, হাদিস : ২৭৯৮)
৩. শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সফরের উদ্দেশ্য ও আচরণের নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা। ক্যাপ্টেন বা আমির নিযুক্ত করে দেওয়া। আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তিন ব্যক্তি কোথাও সফরে বের হয়, তখন তারা তাদের একজনকে যেন আমির (নেতা) মনোনীত করে নেয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬০০)