সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগছে? ঘুম ঠিকঠাক হলেও যেন শরীরে শক্তি নেই? অনেকেই এটাকে ব্যস্ত জীবনের সাধারণ প্রতিক্রিয়া মনে করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি অনেক সময় আমাদের শরীরের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে, এটা যকৃতের জন্য একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে।
যকৃত শরীরের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হিসেবে কাজ করে।এটি রক্ত পরিশোধন থেকে শুরু করে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কিন্তু যখন যকৃত দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন তার প্রভাব আমাদের পুরো শরীরেই পড়ে—বিশেষ করে শক্তির ঘাটতিতে।যকৃতের কর্মক্ষমতা কমে গেলে যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো— অবিরাম ক্লান্তি, মনোযোগে ঘাটতি, ওজন ওঠানামা, চোখ বা ত্বকে হলদে ভাব (জন্ডিস), পেট ফাঁপা, ত্বকে অকারণে চুলকানি, মুখে তেতো স্বাদ কিংবা দমবন্ধ লাগা। যকৃতে সমস্যা থাকলে মল-মূত্রের রঙেও পরিবর্তন আসতে পারে।এসব লক্ষণ সাধারণ মনে হলেও, উপেক্ষা করলে তা বড় রোগে রূপ নিতে পারে।বিশেষজ্ঞরা বলেন, যকৃত যখন স্বাভাবিকভাবে বিষাক্ত উপাদান দূর করতে পারে না, তখন তার প্রভাব মস্তিষ্কেও পড়ে। ফলে ‘ব্রেন ফগ’ বা মানসিক ধোঁয়াশা, মনোযোগের অভাব কিংবা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। অবিরাম ক্লান্তি, মস্তিষ্কে ধোঁয়াশা বা অন্য উপসর্গগুলো যদি দীর্ঘদিন থাকে আর সাধারণ বিশ্রামেও না কমে, তবে যকৃতের পরীক্ষা করানো উচিত।বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত। এর প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ খুব একটা দেখা যায় না। তাই অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না কখন যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একমাত্র ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা বা রক্তপরীক্ষার মাধ্যমেই অনেক সময় এটি ধরা পড়ে।জীবনযাপন-জনিত ক্লান্তি আর যকৃত-সম্পর্কিত ক্লান্তির মধ্যে পার্থক্য করাটা এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (অতিরিক্ত চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার), মদ্যপান এবং অলস জীবনযাপনও ক্লান্তির কারণ হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যকৃত-জনিত ক্লান্তি ঘুমের পরও কমে না। এই ক্লান্তি গভীর যা প্রতিদিনের কাজকে দুরূহ করে তোলে।যকৃতকে সুস্থ রাখতে জীবনযাপনের নানা ক্ষেত্রে সচেতনতা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে— অ্যালকোহল, চিনি, ভাজা খাবার ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বাদ দেওয়া, পালংশাক, বিট, রসুন, হলুদ, অ্যাভোকাডো, জলপাই তেলের মতো যকৃত-বান্ধব খাবার খাওয়া, শরীরচর্চা করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে সতর্ক থাকা।