মানুষের জীবনে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবার-পরিজন হলো মানুষের সবচেয়ে নিকটতম আশ্রয়স্থল। সমাজের কল্যাণ যেমন শুরু হয় পরিবারের ভিত থেকে, তেমনি অবহেলার ছাপও সবার আগে দেখা যায় পরিবারেই। ইসলামে পরিবারকে শুধু সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা হয়নি; বরং পরিবারের সদস্যদের হক আদায় করাকে একটি বড় ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
কোরআনুল কারিমে বারবার পরিবার ও আত্মীয়দের প্রতি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অসংখ্য হাদিসে শিক্ষা দিয়েছেন যে, পরিবারের ভরণপোষণ করা শুধু পার্থিব কর্তব্য নয়, বরং তা নেকীর কাজ এবং সাদাকার অন্তর্ভুক্ত।
নিচের হাদিসটি এমনই এক অমূল্য হাদিস—
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِذَا أَنْفَقَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِهِ يَحْتَسِبُهَا فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ ”.
অর্থ: ‘আবূ মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সাদাকা হয়ে যায়।
’
-(বুখারি, হাদিস : ৫৫)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন যে, একজন মুসলিম যখন নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যয় করে, সেটিও নেকী ও সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হয়। সাধারণত মানুষ মনে করে দান-খয়রাত মানেই গরিব-মিসকিনকে দেওয়া, কিংবা মসজিদ-মাদরাসায় দান করা। কিন্তু ইসলামে দান বা সাদাকার ধারণা অনেক বিস্তৃত।
ইসলামে সাদাকার ব্যাপকতা
ইসলামে সাদাকা শুধু অর্থ দেওয়া নয়, বরং প্রতিটি ভালো কাজকেই সাদাকা বলা হয়েছে।
যেমন: কারো মুখে হাসি ফোটানো সাদাকাহ (তিরমিজি, ১৯৫৬)। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো সাদাকাহ (বুখারি, ২৮২৭)।নিজের স্ত্রীকে সুখি রাখা সাদাকাহ (মুসলিম, ১০০৬)। সুতরাং পরিবারের জন্য খরচ করাও আল্লাহর কাছে সাদাকা।
তবে এই সাওয়াব পেতে হলে পুণ্যের নিয়ত রাখতে হবে।
কেননা ইবাদতের জন্য শর্ত হলো—ব্যয় করার সময় ‘সওয়াবের নিয়ত’ থাকতে হবে। যদি কেউ কেবল খ্যাতির জন্য বা শুধুই সামাজিকতার জন্য ব্যয় করে, তবে তা ইবাদত নয়। কিন্তু যদি সে মনে করে যে, আল্লাহ আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন তাই আমি আমার পরিবারকে হালাল খাবার-পরিধেয় দিচ্ছি। তাদের প্রতি সদয় হওয়া আমার জন্য আবশ্যক। তবে এই ব্যয়ও সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে।
পরিবারের অধিকার সর্বাগ্রে
কোরআন ও হাদিসে পরিবারের উপর ব্যয়কে সর্বাগ্রে রাখা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلْ مَا أَنفَقْتُم مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالأقْرَبِينَ
“তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কী খরচ করবে? বলুন—তোমরা যে কল্যাণকর জিনিস খরচ করবে তা হোক পিতা-মাতার জন্য এবং নিকট আত্মীয়দের জন্য।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৫) অর্থাৎ দানের ক্ষেত্রে প্রথম দায়িত্ব পরিবার ও নিকট আত্মীয়। তাই অন্যকে দান করার আগে নিজের পরিবারকে সঠিকভাবে দেখাশোনা করাই বড় সাদাকা।
কাজেই পরিবারের ভরণপোষণ করা শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং ঈমানের দাবি। হাদিসে এসেছে: “তুমি যা খরচ করো তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো যা তুমি পরিবারের জন্য ব্যয় করো।” (মুসলিম, হাদিস: ৯৯৫) এমনকি, স্ত্রীর মুখে এক টুকরা খাবার তুলে দেওয়াও সাদাকা। (বুখারি,, হাদিস : ৫৩৬৮)
তাই একজন মুমিন যখন পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করে, সন্তানদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করে, স্ত্রীর ভরণপোষণ করে—এগুলো সবই তার আমলনামায় সাদাকা হিসেবে লেখা হয়। যদি তার সাওয়াবের নিয়ত থাকে।
এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ..