গর্ভকাল সবচেয়ে কঠিন সময় : সন্তান গর্ভধারণ ও প্রসবকালে একজন নারী জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করে। পবিত্র কোরআনে মায়ের গর্ভকালীন দুঃখ ও কষ্টকর মুহূর্তের বর্ণনা এসেছে। এই কঠিন সময় মারইয়াম (আ.) গর্ভধারণ ও প্রসব বেদনা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু পর্যন্ত চেয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তাকে গর্ভে ধারণ করে, অতঃপর তাকে নিয়ে দূরবর্তী স্থানে চলে যায়। প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুরগাছের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে, সে বলল, হায়, আমি যদি এর আগেই মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতাম।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২২-২৩)
মাতৃত্বকালীন সেবা : গর্ভকালে মায়েদের শারীরিক ও মানসিক সেবা প্রয়োজন। এ কারণে মারইয়াম (আ.)-কে স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ ছাড়াও খেজুর ও পানি পানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে সব ধরনের দুশ্চিন্তা না করতে বলা হয়েছে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য পবিত্র কোরআনের তিনটি আয়াতে বিশেষ উপদেশ রয়েছে। যেখানে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নিচ থেকে এক ফেরেশতা তাকে ডেকে বললেন, তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না, তোমার রব তোমার পাদদেশে একটি ঝরনা তৈরি করেছেন। তুমি তোমার কাছের খেজুরগাছের ডাল নাড়া দাও, তা থেকে পাকা খেজুর পড়বে। অতএব আহার করো, পানি পান করো, চোখ জুড়াও, আর কোনো মানুষ দেখলে বলবে, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে চুপ থাকার মানত করেছি, সুতরাং আজ আমি কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলব না।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ১৬-২৬)
আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা : আল্লাহর কাছে মুমিনের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও দুঃখ-কষ্টের বিনিময় রয়েছে। তাই গর্ভধারণ ও প্রসবকালীন যাতনার জন্য আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করা কর্তব্য। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম যে ক্লান্তি, কষ্ট, দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠায় আক্রান্ত হয় এমনকি যে তার শরীর কাঁটাবিদ্ধ হলেও সব কিছুর বিনিময়ে আল্লাহ তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৪২)
শহীদের মর্যাদা লাভ : গর্ভধারণ করে কোনো নারী মারা গেলে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। জাবির বিন আতিক (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাসুল (সা.) তাঁকে দেখতে আসেন। তাঁর পরিবারের কেউ বলল, ‘আমরা আশা করেছিলাম আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ করবে।’ তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদের সংখ্যা খুবই কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে মারা গেলে শহীদ। মহামারিতে মারা গেলে শহীদ। গর্ভাবস্থায় মারা যাওয়া নারীও শহীদ। পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে এবং ক্ষয়রোগে মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৭৯)
তা ছাড়া সর্বাবস্থায় সহজতার জন্য আল্লাহকে স্মরণ করা এবং দোয়া করা উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও অনুগ্রহস্বরূপ, কিন্তু তা জালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)